বিরেণ সরকার। নিজের এক টুকরো জমি নেই। নেই বসতবাড়ি। একটি ভাড়া বা’ড়িতে থাকেন। গ্রামে গ্রামে ফেরি করে সি’লভারের তৈরি হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করে দুই ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া ক’রিয়েছেন।
–
ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ আর সংসারের ভরণপোষণ চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়েছে তাকে। লে’খাপড়ার প্রতি দুই স’ন্তানের অদম্য ইচ্ছে দেখে নিজের দুঃখ-কষ্টগুলো নীরবে বয়ে বেরিয়েছেন। নিজের সুখ-আহ্লাদের কথা চিন্তা ক’রেননি বিরেণ সরকার। মনের নিভৃত কোণে আস্তে আস্তে
বেড়ে উঠতে থাকে একটি স্বপ্ন। একদিন প্রাণ খুলে হাসবেন। প্রশংসায় ভাসবেন। অবশেষে সেই স্বপ্ন আজ হাতের মুঠোয়! এখন তিনি বিসিএস ক্যা’ডারের বাবা। তার মেয়ে বিথী রানী সরকার এখন বিসিএস ক্যাডার। কি’শোরগঞ্জের নিভৃত হাওর উপজেলা নিকলী।
–
নিকলী উপজেলা সদরের বড়হাটি গ্রামের বাসিন্দা বিরেণ সরকারের এক ছেলে ও এক মেয়ে। পরিবারের বড় সন্তান বিথি রানী স’রকার। ৩৮তম বিসিএস পরীক্ষায় তিনি শিক্ষা ক্যাডারে নি’য়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। বিথির এমন
সাফল্যে প্রশংসায় ভাসছেন তার বাবা-মা। আশপাশের লোকজন ভিড় করছে তাদের বাড়িতে। বিথির সাফল্যে বাবা বিরেণ আর গৃহিণী মা ময়না সরকারের মুখে যেন হাসি লেগেই আছে। বিরেণ সরকারের বাড়ি মূলত মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উ’পজেলায়।
–
বাবা আর ভাইদের সঙ্গে সিলভারের হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করতেই তিনি নিকলীতে আসেন। তবে এক সময় স্ত্রীকে নিয়ে স্থায়ীভাবে বসত গড়েন হাওর উপজেলা নিকলীতে। সেটি প্রায় ৩৮ বছর আগে। নিকলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শুরু বিথি
রানী সরকারের। পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর স্থানীয় শহীদ স্মৃতি বালিকা উচ্চ বি’দ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন ২০০৮ সালে। এরপর ভর্তি হন ঢাকার তেজগাঁও হলিক্রস কলেজে। সেখান থেকে ২০১০ সালে এইচএসসি পাস করেন। ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
–
২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স শেষ করেন। বিথির একমাত্র ছোট ভাই জয় সরকার দ্বীপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগে মাস্টার্সে পড়ছেন। বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে উত্তীর্ণ হওয়া বিথি রানী
সরকার বলেন, ৩৭তম বিসিএসে অংশ নিলেও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারিনি। তাই আরও প্রস্তুতি নিয়ে ৩৮তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিই। পরে প্রিলিমিনারি ও চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। এ জন্য আমি আমার বাবা-মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞ।
–
তাদের অদম্য ইচ্ছায় আমি আজ সফলতার মুখ দেখেছি। বাবা-মা কষ্ট করে আমাকে লেখাপড়া শি’খিয়েছেন। বাবার ঋণ কোনো দিন শোধ করতে পারবো না। আমি শিক্ষা ক্যাডার পেয়েছি। বিনয় ও সততার সঙ্গে মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করবো।