একজন বিড়ি শ্রমিকের সন্তান শফিকুল ইসলাম। খুব বেশি তিনি লেখাপড়ার স্বপ্ন দেখার সাহস করতে পারেন। আর ভাগ্য সহায় থাকলে বড়জোর একটা ছা-পোষা চাকরি।
কিন্তু অভাবের সংসারে এ সামান্য চাওয়াও তো স্বপ্নই। পড়াশোনার সুযোগ পেলেও ট্রাকের হেলপারি করে পেট চালাতেন শফিকুল। কিন্তু শত প্রতিকূলতাকে যে গুটিকয়েক মানুষ অনুকূলে আনতে পারেন, তাদের আটকায় সাধ্য কার?
আটকাননি তাই শফিকুলও। সবাইকে অবাক করে দিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করলেন। তিনি ৩৫তম বিসিএস এর শিক্ষা ক্যাডারে উত্তীর্ণ হলেন। কুড়িগ্রাম জেলা সদরে তার বাস। বাবা আব্দুল খালেক বিড়ি কারখানায় কাজ করেন। মা গৃহিনী। সাত সদস্যের সংসারে দারুণ অভাব।
বাবার কথায় নিদারুণ অভাবের কথা উঠে এসেছে। বলেন, পাঁচ ছেলে-মেয়ে তার। সব মিলিয়ে সাতজনের সংসার। শফিকুল ইসলাম তার চতুর্থ ছেলে। পড়াশোনার প্রতি এ ছেলের আগ্রহ ছোটকাল থেকেই। কিন্তু অভাবের কারণে কখনোই ভালো করে পড়ার খরচ জোগাতে পারিনি। টাকার অভাবে প্রাইভেট পড়াতে পারিনি। ঠিকমতো
ভাগ জোটেনি শফিকুলের। কিন্তু নিজের চেষ্টা আর মানুষের সহযোগিতায় আজ এতো দূর এসেছে। গর্বিত বাবা এখন তার মানিকের জন্য দোয়া চান সবার কাছে। শফিকুলের মা ছবেনা বেগম। গর্বিত মা জানান, ১৫ শতক বসত ভিটা ছাড়া আমাদের আর কিছুই নাই।
খুব কষ্টে এখানেই সবাই মিলে বসবাস করছি। আমার ছেলে তার পরিশ্রমের ফল পেয়েছে। আল্লাহ মায়ের কথা শুনেছেন। শফিকুলও তার সংগ্রামের কথা বললেন। অভাবের কারণে সপ্তম শ্রেণিতে প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল পড়াশোনা। পরে
বিনাবেতনে পড়ার সুযোগ মেলে। তবুও বই-খাতা-কলম কেনার সাধ্য নেই। কোনমতে এগিয়ে যান। ২০০৫ সালে এসএসসি পরীক্ষা শেষ করে সংসারের হাল ধরেন। পড়ার খরচ জোগাতে কাঠমিস্ত্রির জোগালী হয়েছেন। দিনে ৩০ টাকা মজুরিতে কাজ করতেন।
দিনে ১০ টাকা মজুরিতে ব্যানার-ফেস্টুন লেখারও কাজ করেছেন। ট্রাকের হেলপারিও করেন তিনি। এভাবেই নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে এ প্লাস পেয়ে সবাইকে চমকে দেন। এসএসসি-তে মানবিক বিভাগে
জেলার একমাত্র জিপিএ-৫ পাওয়া ছাত্র হিসাবে লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ আরো বেড়ে যায় তার। পার্বতীপুরের খোলাহাট ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির সুযোগ মেলে।
শিক্ষকসহ বিভিন্ন মানুষের সহযোগিতায় পড়ালেখা শেষ করা শফিকুল নিজ মেধার জোরে এখন বিসিএস ক্যাডার। ৩৫তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে তিনি লালমনিরহাট সরকারি মজিদা খাতুন কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ
দিয়েছেন। ভবিষ্যতের জন্য আরো স্বপ্ন জমিয়ে রেখেছেন তিনি। বলেন, আমার প্রথম বেতনের টাকা দিয়ে বাবা-মায়ের থাকার ঘরটির মেরামতের কাজ করাবো। বাবা-মায়ের নামে একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান চালুর স্বপ্ন আছে আমার। তবে এক সময় আমি অবশ্যই আমার মতো অভাবী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তির ব্যবস্থা করতে চাই। টাকা-পয়সার অভাবে কারও পড়ালেখা যেন থমকে না যায়, সেটা নিশ্চিত করতে চাই আমি।